পাহাড়ি তুলা এখনও প্রচলিত ঝুম পদ্ধতিতেই চাষ করা হয়ে থকে৷ তবে তুলা উন্নয়ন বোর্ডের মাঠকর্মীরা উন্নত পদ্ধতিতে বিভিন্ন এলাকায় প্রদর্শনী খামার প্রতিষ্ঠা করে উন্নত চাষাবাদ প্রণালী অনুসরণের জন্য উদ্বুদ্ধকরণের কাজ চালিয়ে যাচেছ৷
জমি প্রস্তুতকরণ
পাহাড়ি এলাকার মাটি পাহাড়ি তুলাচাষের জন্য উপযুক্ত৷ ঝুম চাষের জন্য নির্বাচিত পাহাড়ের গায়ে শীতের শেষ দিক থেকেই জঙ্গল কাটার কাজ শুরু হয়৷ ফাল্গুন মাসে জমি নির্বাচন করতে হয়৷ জমি মাঝারি উঁচু হলে ভাল, সাধারণতঃ ৫০% ঢাল (slope)পর্যন্ তুলাচাষের জন্য ভাল৷ বেশী ঢাল (slope) হলে জমি পরিচর্যার অসুবিধা হয়৷ নির্বাচিত জমির আগাছা/জঙ্গল নীচ থেকে কেটে দিয়ে মাটিকে আচছাদন (mulch) দিতে হয়৷ অনেক ঝুমিয়া আগাছা কেটে পুড়িয়ে ফেলে৷ জঙ্গল না পুড়িয়ে আচছাদন দিলে মাটির আর্দ্রতাসহ অন্যান্য গুণাগুণ ভাল থাকে এবং পরিবেশ নির্মল থাকে৷ নির্বাচিত জমি পরিষ্কার করার পর জমিটি বীজ বপনের জন্যে প্রস্তুত হয়৷
জাত
(1) পাহাড়ি তুলা - ১ (সাদা);
(2) পাহাড়ি তুলা - ২ (খাকী);
(3) পাহাড়ি তুলা - ৩ (সাদা);
বীজের হার
উন্নত ঝুম পদ্ধতিতে হেক্টর প্রতি বীজের হার নিম্নরূপ:-
ফসল |
হেক্টর প্রতি বীজের হার |
আন |
৪৫.০ কেজি |
তিল |
০.৭ কেজি |
মরিচ |
১.২ কেজি |
ভুট্টা |
১.০ কেজি |
এারফা |
০.৫ কেজি |
তুলা |
১৫-২০.০ কেজি |
কাউন |
১.০ কেজি |
শিম/ফেলন/বরবরটি |
১.৫ কেজি |
অন্যান্য বীজ |
১.২ কেজি |
সার
পাহাড়ি তুলার সারের পরিমাণ নিম্নরূপ
সার |
*একর প্রতি |
হেক্টর প্রতি |
বিঘা প্রতি |
ইউরিয়া |
৫৫ কেজি |
১৩৫ কেজি |
১৮ কেজি |
টিএসপি |
২৭ কেজি |
৬৮ কেজি |
৯ কেজি |
এমপি |
৩০ কেজি |
৭৫ কেজি |
১০ কেজি |
বপন সময়
মে মাসের প্রথম সপ্তাহে পাহাড়ি তুলাবীজ বপনের উপযুক্ত সময়৷ তবে মধ্য এপ্রিল হতে ৩০শে মে পর্যন্ বপন করা চলে৷
বীজ বপন এবং সার প্রয়োগ
পরিমাণমত সব ফসলের বীজ একত্রে মিশিয়ে একটি থোরং-এ (এক ধরণের ঝুড়ি) এবং অন্য আর একটি থোরং-এ অনুমোদিত টিএসপি, এমপি সার এবং অর্ধেক ইউরিয়া সার মিশিয়ে নিতে হবে৷ এওপর ঐ গর্ত থেকে পাহাড়ের ঢালু বরাবর ওপরের দিকে ৪(চার) সেঃমিঃ দরে আর একটি গর্ত করে তার মধ্যে মিশ্রিত বীজ গর্তে পুরে ঢেকে দিতে হবে৷ এওপর গর্ত থেকে পাহাড়ের ঢালু বরাবর ওপরের দিকে ৪(চার) সেঃমিঃ দরে আর একটি গর্ত করে তার মধ্যে মিশ্রিত সার দিয়ে গর্ত ঢেকে দিতে হবে৷ এই নিয়মে বীজ বপন ও সার প্রয়োগ এর কাজ চালিয়ে যেতে হবে৷ বাকী অর্ধেক ইউরিয়া সার চারা গজানোর ৬০ দিন পর একই নিয়মে প্রয়োগ করতে হবে৷
তুলা গাছ পাতলাকরণ এবং আগাছা দমন
পাহাড়ি অঞ্চলে ঝুমিয়ারা আগাছা দমনে তেমন একটা তৎপর নয়৷ সে কারণে তুলা গাছের সাধারণ বৃদ্ধি ব্যাহত হয় এবং ফলন কম হয়ে থাকে৷ বপনের ১৫-২০ দিন পর প্রথমবার তুলাগাছ পাতলা করা ও আগাছা পরিষ্কার করা এবং ৩০-৪০ দিন আর এক দফায় আগাছা পরিষ্কার করা ফলন বৃদ্ধির সহায়ক৷
ক্ষতিকর পোকা
পাহাড়ি তুলায় পোকা এবং রোগ-বালাইয়ের আক্রমণ তুলনামলকভাবে কম৷ সাধারণতঃ ফোটা দাগ বিশিষ্ট গুটিপোকা (Spotted Bollworm) এবং শেষের দিকে লাল গান্ধি পোকার আক্রমণ দেখা দেয়৷
গুটিপোকা:
পাহাড়ি তুলার গাছে যখন কুঁড়ি, ফুল এবং বোল ধরতে শুরু করে তখন এই পোকা গাছের বাড়ন্ ডগা, কুঁড়ি এবং কচি বোল আক্রমণ করে ফসলের বেশ ক্ষতি সাধন করে থাকে৷